
প্রায় প্রতিটি পোষ্যের মালিক লক্ষ্য করেছেন যে তিনি উঠে গেলেই তিনি যেখানে বসেছিলেন ঠিক সেখানেই গিয়ে বসে তাঁর প্রিয় কুকুরটি। কিন্তু কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন পোষ্যের আপনার জায়গা দখল করে নেওয়ার এই আচরণের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। খুব সাধারণ দুটি কারণ হল ১) অ্যাফেকশন বা স্নেহ বা ভালোবাসা। ২) ডমিন্যান্স বা আধিপত্য। বেশিরভাগ সময়ে আপনার কুকুর আপনার জায়গা নিতে চায় কারণ ও মনে করে ওই জায়গাটা নিরাপদ।
এখন প্রশ্ন হল কুকুরের এই আচরণ কি স্বাভাবিক? কেনই বা এমন আচরণ গড়ে ওঠে? যদি এই আচরণ স্বাভাবিক না হয় তাহলে এই আচরণ দূর করার উপায় কী? এবারের বিষয় এইটাই।
সামাজিক প্রাণী হিসেবে কুকুর চায় একটা নিরাপদ এবং নিশ্চিন্ত আশ্রয়। ঠিক এই মানসিকতা রয়েছে ওদের পূর্বসূরী নেকড়েদের দলবদ্ধ হয়ে থাকার মধ্যেও।
এর বাইরে আর যে কারণটা রয়েছে সেটা হল নিজের আধিপত্য প্রদর্শন। এক বাড়িতে একাধিক কুকুর থাকলে সিনিয়র কুকুরের মধ্যে এই আচরণ দেখা যায়।
‘ডমিন্যান্স ইন ডোমেস্টিক ডগস’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাড়ির কুকুরদের এই আচরণের পিছনে রয়েছে পরিবারের মধ্যে একটা ‘র্যাঙ্ক’ বা স্থান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য। যেসব কুকুর বাড়িতে বকা খায়, উপেক্ষিত হয়, সবসময় ভীত হয়ে থাকে তাদের মধ্যেই এমন মালিকের জায়গায় বসার প্রবণতা দেখা যায়। যথাযথ ট্রেনিং পেলে পোষ্য নিজেই বুঝতে পারবে এমন আচরণ করার কোনও প্রয়োজনই নেই।
আগেই বলা হয়েছে আপনার বসার জায়গায় আপনার পোষ্যের বসার পিছনে অন্যতম কারণ হল ভালোবাসা। আপনি উঠে গেলেই লাফ দিয়ে আপনার জায়গায় বসলে বোঝা যায় ও চাইছে উষ্ণতার পাশাপাশি আরামও। আপনার শরীরের গন্ধ আপনার পোষ্যের কাছে পরিচিত এবং নিরাপদ। আপনার পোষ্যের লজিক হল, আপনি যেহেতু ওই জায়গায় বসে ছিলেন তাই ওই জায়গা অবশ্যই নিরাপদ। ঠিক এই কারণেই আপনার পোষ্য আশ্রয় নেয় আপনার বিছানায়, আপনার গাড়িতে, আপনার কোলে।
কুকুর অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী। খুব দ্রুত সে বুঝে নেয় বাড়ির সদস্যদের রুটিন এবং আচরণ। সে জানে আপনি কোথায় কোথায় বাড়ির ভিতরে ঘোরাফেরা করেন। সে শুধু আপনার জায়গায় বসে এলাকা পাহারা দিচ্ছে। যে মুহূর্তে কুকুর বুঝতে পারে আপনি ওকে খাদ্য এবং আশ্রয় দেবেন, ও আপনাকে বিনিময়ে দেবে বিশ্বস্ততা, আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই ও আপনাকে অনুসরণ করবে।
আরও একটা কারণ আগে বলা হয়েছে। সেটা হল আপনার জায়গায় ওর বসার কারণ হল ও দেখাতে চায় এই জায়গাটা এখন ওর নিয়ন্ত্রণে। এটা হতে পারে ওর এই নিয়ন্ত্রণ দেখানোর উদ্দেশ্য বাড়ির অন্য সদস্য কিম্বা অন্য বাড়ির কুকুর। ওর এই আচরণের পিছনে সম্ভবত রয়েছে অতীতে ওর প্রতি অবহেলা এবং উপেক্ষার ইতিহাস। এখন নতুন জায়গায় এসে ও পরিবারে নিজের জায়গা খুঁজে নিতে চাইছে।
এখন আপনার পোষ্য যদি এমন আচরণ মাঝেমধ্যে করে এবং তখন যদি সে আনন্দে লেজ নাড়াতে থাকে তাহলে ওর এই আচরণ নিয়ে ততটা বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু প্রায়শই যদি এমন আচরণ করে এবং তখন সঙ্গে যদি আগ্রাসী ব্যবহার থাকে তাহলে বুঝবেন পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগে আপনার পোষ্যের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
এমন পরিস্থিতিতে একজন পেশাদার ট্রেনার নিয়োগ করুন। নচেৎ, আপনার পোষ্যকে একটা ভালো ট্রেনিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিন। পেশাদার ডগ হ্যান্ডলাররা কুকুরের আচরণ দেখলেই বুঝে যাবেন কী করা উচিত।
এর বিকল্প রাস্তা হল আপনি নিজে প্রশিক্ষণ দেবেন। কিন্তু সেটা প্রশিক্ষণের কিছু না জেনে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই আপনার পোষ্যের এই জটিল ব্যবহার দূর করতে পেশাদার ট্রেনারের উপর নির্ভর করাই শ্রেয়।
Post a Comment
You must be logged in to post a comment.