
ক্রিস্টিন ডেল’ আমোরে, মার্জার-মনোভাবনা নিয়ে তাঁর এক নিবন্ধে যা জানিয়েছেন তার নির্যাস হল, ‘বিড়ালরা কুকুরদের মতো একেবারেই নয়, তারা মানুষদের আরও একটি বিড়াল ছাড়া কিছুই মনে করে না।’
বিড়ালের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক প্রায় ১০ হাজার বছরের। হিসেব মতো পৃথিবীতে যত সংখ্যক কুকুর আছে, তার তিনগুণ বিড়াল আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা আজও বিড়াল সম্পর্কে অনেকটাই জানি না, এমনকী এটাও জানিনা তারা তাদের ‘পেরেন্ট’ সম্পর্কে ঠিক কী ধারণা পোষণ করে।
ক্রিস্টিন-এর মতো ‘ক্যাট সেন্স’-এর লেখক জন ব্র্যাড শ বলেছেন, ‘কুকুর আমাদের যে ভাবে বোঝে বিড়াল সে ভাবে আমাদের বোঝে না।’
একদল বিড়াল একসঙ্গে থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে কেমন আচরণ করে
তা নিয়ে এক পরীক্ষা করেছিলেন জন। তিনি লক্ষ করেছেন কী ভাবে
তারা খেলনা নিয়ে একজোটে খেলে, দিনের ভিন্ন সময়ে তাদের আচরণ কেমন হয়, ‘পেরেন্ট’দের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন। পোষ্যের ‘পেরেন্ট’দের এক লম্বা প্রশ্নমালা ধরিয়ে দিয়ে তিনি
জানতে চেয়েছেন তাঁরা তাঁদের পোষ্যকে ঠিক কীভাবে দেখেন। এই পরীক্ষা
শেষে তিনি বিড়ালদের সম্পর্কে ওই সিদ্ধান্তে আসেন।
কুকুর নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। কী ভাবে কুকুর মানুষের সঙ্গে আচরণ করে দেখা হয়েছে সেটাও। বোঝা গিয়েছে কুকুর মানুষকে কুকুর ছাড়া অন্য কিছু ভাবে। যে মুহূর্তে তারা কোনও মানুষকে দেখে তাদের আচরণ বদলে যায়। একজন মানুষের সঙ্গে তারা যে ভাবে খেলে সেটা অন্য কোনও কুকুরের সঙ্গে খেলার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু বিড়াল যখন মানুষের সংস্পর্শে আসে তখন তাদের আচরণ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি এখনও। একটা ব্যাপার বোঝা যায় যে মানুষ যে তাদের চেয়ে আকৃতিতে বড় সেটা তারা বুঝতে পারে। কিন্তু নিরীক্ষায় এটাও বোঝা গিয়েছে, তারা তাদের সামাজিক ব্যবহারবিধি বদল করতে ততটা উৎসাহী নয়। দেখা গিয়েছে মানুষ আকৃতিতে বড় হলেও বিড়াল যে ভাবে অন্য বিড়ালের সঙ্গে আচরণ করে, মানুষের সঙ্গেও আচরণ করে একই রকম ভাবে। জনের মতে বিড়াল মানুষকে মনে করে ‘বিগ , স্টুপিড ক্যাট’।
কিন্তু সত্যি সত্যিই কি জানা যাবে কোনওদিন আমাদের সম্পর্কে বিড়াল কী ভাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন। বিড়ালের আচরণ নিয়ে তাঁর গবেষণায় সবচেয়ে বিস্ময়কর কী খুঁজে পেয়েছেন সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, ‘দেখার চেষ্টা করেছি একটা পোষা বিড়াল তার ‘পেরেন্ট’-এর অনুপস্থিতিতে কতটা স্ট্রেসড হয় এবং তার ফলে তাদের মানসিক পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যের পরিবর্তন কতটা হয়। পোষ্যের ‘পেরেন্ট’এর কাছে কেন একটা বিড়াল একা ঘরে থাকলে জোরে জোরে ডাকে? আমার মনে হয় বিড়াল দ্রুত শিখে নিতে চায় তারা কোনও বিশেষ শব্দ করলে ‘পেরেন্ট’ ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। যদি সে দেখে এই রকম আওয়াজ করলে ‘পেরেন্ট’ অন্য ঘর থেকে তার ঘরে চলে আসছে, তা হলে ভবিষ্যতেও সে ওই রকমই আওয়াজ করবে। বিড়াল আসলে এই ভাবেই মানুষের সঙ্গে আচরণবিধি শেখে।’
দেখা গিয়েছে বাড়ির নানা সদস্যের সঙ্গে বিড়ালের আচরণ আলাদা। এটা কেন? এ বিষয়ে ক্রিস্টিনের বিশ্লেষণ হল, ‘আমরা ওদের যতটা চালাক ভাবি, বিড়াল কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি স্মার্ট। তারা দ্রুত হিসেব করে নিতে পারে পরিবারের কার সঙ্গে কেমন আচরণ করলে তার সুবিধে। তারা বুঝে ফেলে সহজেই পরিবারের কে ভোর চারটায় ঘুম থেকে ওঠে এবং তখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কিছু খাদ্য জুটবে।’
তা হলে বিড়াল কেন আমাদের গায়ে এত বেশি গা ঘষে?
এর উত্তরে ক্রিস্টিনের বক্তব্য, ‘ঠিক যে ভাবে একটি বিড়াল তার মায়ের গায়ের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে, সে ভাবেই ওরা এমন আচরণ মানুষের সঙ্গেও করে। মা বিড়াল এবং বাচ্চা বিড়ালের মধ্যে যে আচরণ থাকে, তারই বহিঃপ্রকাশ আমাদের সঙ্গে বিড়ালের এই আচরণে। এর থেকেই বোঝা যায় মানুষকে বিড়াল বড় মাপের বিড়াল ছাড়া আর কিছুই ভাবে না।’
Post a Comment
You must be logged in to post a comment.