
গবেষকরা সহমত হয়েছেন একটা ব্যাপারে। বিড়াল সত্যি সত্যিই বুদ্ধিমান প্রাণী। চিকিৎসকরা মনে করেন ওরা চোখ দিয়ে আমাদের নিরীক্ষণ করে নাকি বুঝতে পারে আমরা কী ভাবছি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনা ওদের মস্তিষ্কের ভিতরে কী ঘটছে। এই কারণেই বিড়াল আমাদের কাছে অত্যন্ত রহস্যময় প্রাণী। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল ওদের নিয়ে গবেষণা করার চেষ্টা করলে ওরা অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে।
বৈজ্ঞানিকরা বিড়ালের মস্তিষ্ক সম্বন্ধে যে সিদ্ধান্তে এসেছেন সেটা হল, অন্যান্য বুদ্ধিমান প্রাণীর মস্তিষ্কের মতোই বিড়ালের মস্তিষ্ক। শুনলে অবাক হবেন আপনার পোষ্য বিড়ালটির মস্তিষ্কের গঠন প্রায় ৯০ শতাংশ আপনার মস্তিষ্কের মতোই। আরও অবাক হবেন জানলে একটি বিড়ালের সেরিব্রাল কর্টেক্সে (যেখানে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বা জটিল সমস্যা সমাধানের ব্যাপারটা ঘটে) রয়েছে ৩০ কোটি নিউরন। এই সেরিব্রাল কর্টেক্স দিয়েই সমস্ত কাজের পরিকল্পনা করা হয়, সমস্ত রকমের (শরীরী এবং ভোকাল) ভাষার বিশ্লেষণ করা যায় এবং এর মাধ্যমেই স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব। এই কারণেই একটি বিড়াল দেখে সব কিছু শেখার চেষ্টা করে। মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কের ভিসুয়াল এরিয়ায় যত সংখ্যক নার্ভ সেল থাকে বিড়ালের থাকে তার চেয়েও অনেক বেশি।
এ বার প্রশ্ন হল সব বিড়ালই কি একই মাপের বুদ্ধিমান? গবেষকরা সেরা তিন প্রজাতির বুদ্ধিমান বিড়ালের নামোল্লেখ করেছেন। অ্যাবিসিনিয়ানস, সায়ামিজ, বেঙ্গলস। বিড়ালের বুদ্ধিমত্তা মাপা হয় মালিকের সঙ্গে তার মেলামেশার ইচ্ছে কতটা তার উপর নির্ভর করে। কতটা তারা সামাজিক সেটাই একমাত্র বিবেচ্য।
বুদ্ধির প্রসঙ্গ যখন এলই তখন স্বাভাবিকভাবেই বিড়ালের সঙ্গে কুকুরের বুদ্ধির তুলনা আসবে। কুকুর অনেক বেশি স্মার্ট তার কারণ তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। বিড়ালের চেয়েও কুকুর অনেক বেশি দিন গৃহপালিত অবস্থায় রয়েছে। আর সেই কারণেই তারা অনেক বেশি সামাজিক।
কিন্তু বিড়াল যেহেতু মানুষকে অনুসরণ করে না আর মানুষের কোনও পরীক্ষাতে সহায়তা করে না, এতেই প্রমাণিত হয় তার নিজস্ব মন আছে, যা তার মালিককে খুশি করার জন্য অর্থহীন কাজ করতে বাধা দেয়। বিড়াল যখন আপনাকে পাত্তা দেয় না, তখন আপনার মনে হতে পারে বিড়াল আপনাকে ঠিক বুঝল না, কিন্তু আসল ব্যাপারটা হল কুকুরের মতো বিড়াল আপনাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না।
অনেক কুকুর মালিক মনে করেন মানুষের সহায়তা করার ব্যাপারে কুকুর এগিয়ে, বিড়ালের চেয়ে। কুকুর অনেক বেশি স্মার্ট। সত্যি পুলিশ কুকুরের মতো পুলিশ বিড়াল নেই। কিন্তু মেইল ডেলিভারি বিড়াল রয়েছে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এক খবর অনুযায়ী উনিশ শতকে বেলজিয়ান সোসাইটিতে খবর দেওয়া নেওয়ার জন্য বিড়ালের ব্যবহার ছিল।
পরে এর সত্যতা যাচাই করার জন্য ৩৭টি বিড়াল নিয়ে একটা পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকের গলায় একটি চিরকুট ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। দেখা গেল প্রতিটি বিড়ালই গলায় ঝোলানো চিরকুট নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছেছে। কোনওটি আগে, কোনওটি দেরিতে। পরে বিড়ালের বদলে এই কাজে পায়রা ব্যবহার শুরু হয়। তারা বিড়ালের চেয়ে দ্রুত বলে।
অতএব, বিড়াল যে যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং নিজের মর্জি-মাফিক চলে বলেই যথেষ্ট স্মার্ট, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
Post a Comment
You must be logged in to post a comment.