
বিড়ালের জীবন নাকি ন’টা। এমন কথা হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু জেনে রাখুন বিড়ালের জীবন একটাই। আমাদের মতো। কিন্তু এটাও ঠিক, আমরা যে উচ্চতা থেকে পড়লে মুহূর্তে মারা যাব, তার অনেক বেশি উচ্চতা থেকে পড়লে বিড়াল হেলতে দুলতে চলে যাবে। কেন?
এই কেনর উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা একশোর বেশি বিড়াল নিয়ে একটা পরীক্ষা চালিয়েছেন। দেখেছেন ৯০ শতাংশ বিড়াল ৩২ তলা বাড়ির উপর থেকে পড়েও দিব্যি বেঁচে আছে। বাকি ১০ শতাংশ বিড়াল প্রাণ হারিয়েছে। যারা বেঁচে আছে তাদের মধ্যে কয়েকটির কিছু জায়গায় ছড়ে গিয়েছে স্রেফ।
এই পরীক্ষার ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে। খু-উ-ব স্লো মোশনে (প্রতি সেকেন্ডে ৬০ টি ফ্রেম) সেই ভিডিয়ো দেখে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন বিড়ালটি ঠিক কী করে, পড়ার নানা মুহূর্তে। তাঁরা স্বীকার করেছেন সবটা যে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, তা নয়। তবে তার ৯০ শতাংশ বুঝেছেন এটাও ঠিক।
তাঁরা বলছেন, বাঁচতে হলে বিড়ালকে তার পা দিয়ে ল্যান্ড করতেই হবে। তা হলেই তারা অনেক অনেক উঁচু থেকে পড়লেও বেঁচে যাবে। এখন প্রশ্ন হল কী ভাবে বিড়াল এটা পারে? বিজ্ঞানীরা বলছেন বিড়ালের শরীরের মধ্যেই রয়েছে একটা ভারসাম্য ব্যবস্থা, যাকে বলা হয় ‘রাইটিং রিফ্লেক্স’। এই ‘রাইটিং রিফ্লেক্স’ তাদের সাহায্য করে পায়ের উপর ল্যান্ড করতে। তবে এটা নির্ভর করবে কত উঁচু থেকে সে পড়ছে তার উপর।
কী করে এই ‘রাইটিং রিফ্লেক্স’ ?
এই রিফ্লেক্সের দৌলতে বিড়াল নিজের শরীরকে ভাসমান অবস্থায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বা রোটেট করতে করতে পড়ে। বিড়ালের কানের মধ্যে ভেস্টিবুলার অ্যাপারেটাস রয়েছে যা শরীরের ব্যালান্স এবং ওরিয়েন্টেশন ঠিক করতে সাহায্য করে এবং পড়তে পড়তেই দ্রুত বিড়াল বুঝে যায় মাথা কোন দিকে রাখতে হবে। সেই অনুযায়ী শরীরকে ঘুরিয়ে বা রোটেট করতে থাকে।
বিড়ালের শরীরের হাড়ের গঠনও অন্য প্রাণীর থেকে আলাদা। বিড়ালের কোনও কলারবোন থাকে না এবং তাদের মেরুদণ্ড অত্যন্ত নমনীয়। এই নমনীয়তাই তাদের পড়ার সময় কোন দিকে শরীর ঘোরাতে হবে সেটা ঠিক করতে সাহায্য করে। পড়ার সময় ওরা পিঠটাকে ধনুকের মতো বেঁকিয়ে নেয়, পিছনের পা পেটের তলায় ঢুকিয়ে দেয় আর সামনের পা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে। বিড়ালের শরীরের মাপের সঙ্গে ওজনের অনুপাত এতই কম যে সেটা তাকে পায়ের উপর ল্যান্ড করতে সাহায্য করে এবং পড়ার গতি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এই ‘রাইটিং রিফ্লেক্স’ বিড়ালের মধ্যে দেখা যায় ৩ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে।
কোন উচ্চতা থেকে বিড়ালটি পড়ছে তার উপর নির্ভর করবে সে তার পায়ের উপর ল্যান্ড করবে কি না। দেখা গিয়েছে ৭ থেকে ৩২ তলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়লে বিড়াল পায়ের উপরেই ল্যান্ড করবে। কিন্তু তার থেকে কম উচ্চতা হলে আহত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বৈজ্ঞানিকদের মতে, উচ্চতা বেশি হলে বিড়াল তার ‘রাইটিং রিফ্লেক্স’ কাজে লাগানোর সময় পেয়ে যায়, উচ্চতা কম হলে সেটা পায় না। পড়ার সময় বিড়ালের সর্বোচ্চ গতি থাকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এই সর্বোচ্চ গতি যখন সে পায় তখনই সে হাত এবং পা যতটা সম্ভব ছড়িয়ে দেয়, ঠিক যেন উড়ন্ত কাঠবিড়ালি। এর ফলে ওর শরীরের মাপ অনেক বেড়ে যায় আর তার ফলে বাতাসের প্রতিরোধ বেড়ে যায়। একটা ছোটখাটো প্যারাশ্যুট হয়ে পড়ে সে। আর তার ফলেই বেড়ে যায় উল্টো প্রতিরোধ। ফলে গতি কমে যায় এবং ধীরে ল্যান্ড করতে পারে। তবে যেসব বিড়ালের শরীরের ওজন অত্যধিক বেশি তারা উপর থেকে পড়লে খুব সহজে ল্যান্ডিং হয় না। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকেই।
ছোটবেলা থেকেই গাছের উঁচু ডাল থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ার অভ্যেস বিড়ালের থাকে। তখন থেকেই শিক্ষা পেয়ে যায় কীভাবে পড়লে পায়ে কম লাগবে। বিড়ালের পা তুলনায় বড় এবং পেশিবহুল। এই পেশিই শক অ্যাবজর্বারের কাজ করে।
তবে মনে রাখবেন, যদি আপনার বিড়াল উপর থেকে পড়ে গিয়ে থাকে, তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান, কারণ ওর ভিতরে কোনও আঘাত হতেই পারে।
Post a Comment
You must be logged in to post a comment.