
কুকুর এসেছে বন্য নেকড়ে জাতীয় প্রাণী থেকে। এই বন্য প্রাণীকে আমরা যখন বাড়িতে পুষি তখন সে তার বন্য আচরণ থেকে সরে এসে নানাভাবে এই নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বেড়ে উঠতে চেষ্টা করে। তাই পেট ওনার বা পোষ্য মালিকদের প্রথমেই লক্ষ রাখা উচিত যে তাঁর পোষ্য ঠিকভাবে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে কিনা।
এখন প্রতিটি প্রাণীরই নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র রাস্তা আছে যা তাদের নিজেদের পক্ষে সুবিধাজনক। জৈৱিকভাবে এই ধরনের মানিয়ে নেওয়া আসলে পরিচিত গঠন, কার্যকারিতা এবং আচরণবিধির একধরনের আমূল পরিবর্তন। এই ধরনের পরিবর্তনই এক বিশেষ অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে সেই প্রাণীর বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়।
যখনই আপনি বাড়িতে কোনও কুকুর বাচ্চা আনবেন, সে কিছুটা সময় নেবে চারপাশের পরিবেশ মেপে নিতে, এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে আপনার পরিবারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে।
এটা মাথায় রাখতেই হবে যতই আমরা কুকুরকে মানুষের সেরা বন্ধু বলিনা কেন, তাদের ভিতরে কিন্তু বন্য অস্তিত্বটা রয়েই যায়। যতই তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক বা গৃহপালিত করার চেষ্টা করা হোক তাদের বেসিক বন্য প্রবণতা কিন্তু থেকেই যায়। নেকড়ে এবং কুকুরের গঠনের তুলনা করলেই তাদের শারীরিক মিলগুলো যেমন চোখে পড়বে, তেমনি চোখে পড়বে তাদের ব্যবহারিক মিলগুলোও। তাই নেকড়ে প্রজাতির প্রাণীকে অ্যাডাপট করে গৃহপালিত করে তোলা সম্ভব হয়েছে কুকুর চেয়েছে বলেই। কুকুরের মধ্যে এই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে বলেই সে পেরেছে।
তবে দেখা গিয়েছে বাচ্চা কুকুরদের পক্ষে নতুন পরিবেশের সঙ্গে বড়দের চেয়ে মানিয়ে নেওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। কুকুর যখন জন্মায় তখন সে না পায় দেখতে, না পায় শুনতে। তাই যে পরিবেশে তারা জন্মায় সেই পরিবেশে বড় হয়ে উঠলে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের কোনও অসুবিধে হয় না। গবেষকরা দেখেছেন অতীতে কোনও কুকুর যদি কোনও বাড়ির পোষ্য হয়, তা হলে তার পক্ষে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হবে তার চেয়ে, যে আগে কখনও কোথাও থাকেনি। মানুষও ঠিক এমনই নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে সময় নেয়। তাই যদি দেখেন কোনও কুকুর ভয় পাচ্ছে বা অস্বস্তিতে আছে, তাহলে বুঝবেন সেই কুকুরটি সম্ভবত নতুন পরিবেশের সঙ্গে সম্পুর্ণ মানিয়ে নিতে পারেনি এখনও।
কুকুর তার নানা ইন্দ্রিয় দিয়ে
নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। যেমন শ্রবণেন্দ্রিয়, ঘ্রাণেন্দ্রিয়, দৃষ্টি শক্তি এবং স্পর্শ। এইভাবে ইন্দ্রিয় দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ফলে তার প্রভাব কুকুরের ব্যবহারের উপর পড়বেই।
চোখের সাহায্যে কোনও মোশন এবং আলোর নড়াচড়া কুকুর বুঝতে পারে। তাদের এই ক্ষমতাই তাদের রাতে শিকার ধরা বা পাহারা দেওয়ার কাজে অতুলনীয় করে তোলে। এর পাশাপাশি তাদের অনেক সূক্ষ্ম শব্দ শুনতে পাওয়ার ক্ষমতাও কাজে আসে।
এইসব গুণ আছে বলেই কুকুর মানুষের সেরা প্রহরী হিসেবে চিহ্নিত। কুকুর সম্পূর্ণ অন্য পরিস্থিতিতে নিজের নানা গুণের সাহায্যে নিজেকে মানিয়ে নিয়েই মানুষের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠেছে। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে ১০ লক্ষ গুণ বেশি। কুকুরের এই গুণ কাজে লাগিয়েছে মানুষ নানা রকম বোমা বা বিপজ্জনক বস্তু খুঁজে বের করতে। কুকুর সেটা বুঝতে পেরেই আরও বেশি করে নিজের শক্তিকে বৃদ্ধি করে মানুষের কাছে চলে আসতে।
দেখা গিয়েছে যদি কোনও বাচ্চা কুকুরকে সীমিত পরিবেশে বড় করে তোলা হয়, তা হলে তার মস্তিষ্কের বিকাশও সীমিতই থাকবে। এক্সপোজড পাপি হবে না সেই বাচ্চা। এদের পক্ষে অচেনা বস্তু বা মানুষের সঙ্গে দ্রুত পরিচয় করে ওঠা সম্ভব হবে না। এদের ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতি বা নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা খুবই অসুবিধের এবং সময় সাপেক্ষ। তাই কুকুরকে বড় করে তুলতে হবে এমনভাবে যাতে তার বিকাশ সম্পূর্ণ হয়।
কুকুর সব সময় নিজের এলাকা চিহ্নিত করে রাখে। যদি দেখেন আপনার কুকুর নিশ্চিন্তে তার নিজস্ব এলাকা চিহ্নিত করছে, তা হলেই বুঝবেন আপনার পরিবেশের সঙ্গে আপনার কুকুর পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে।
Post a Comment
You must be logged in to post a comment.